আলোচনার শুরুতেই নারীর প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। ইসলাম নারীকে পূর্ণ মানুষের মর্যাদা দেয় কিনা সেটি আমাদের জানতে হবে। তারপর জানতে হবে ইসলাম নারীর প্রতি কি কি নির্দেশনা দিয়েছে, এবং নারীর সাথে কেমন আচরণ করার জন্য পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছে। একজন মুসলিম নারীকে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুমতি ইসলাম দেয় কিনা সেটিও আলোচনা হবে।
নারী বনাম মানুষঃ ইসলাম প্রেক্ষিত
ইসলাম নারীকে দুনিয়ার সেরা ভোগ্যপণ্য আখ্যা দিয়েছে, এবং এটি যদুমধু মার্কা কোন হুজুরের বক্তব্য না বরং ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ নিজেই নারীকে এভাবে সম্মানিত করেছেন। মোহাম্মদ বলেছেন: দুনিয়া হচ্ছে ভোগের উপকরণ এবং দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ উপভোগ্য বস্তু হচ্ছে পুণ্যবতী নারী। (মুসলিম : ১৪৬৭)
নারীকে পণ্যের মর্যাদা দিলেও যেহেতু শ্রেষ্ঠ পণ্যের মর্যাদা দিয়েছে তাই এটি নিয়ে যদি কোনো হিজাবি অথবা বোরকাওয়ালী খুশি থাকতে চায় তবে সেটা তার ব্যাপার।
এবারের শ্রেষ্ঠ পণ্যের সাথে পণ্যের মালিক মুসলিম পুরুষদের কি আচরণ করতে বলেছে ইসলাম সেটি চলুন দেখে নেয়া যাক। সহীহ আল-মুসলিম এর এই হাদিসটি পড়ুনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নারী পাঁজরের হাড়ের ন্যায় (বাঁকা)। যখন তুমি তাকে সোজা করতে যাবে তখন তা ভেঙ্গে ফেলবে আর তার মাঝে বক্রতা রেখে দিয়েই তা দিয়ে তুমি উপকার হাসিল করবে” (বোখারি : ৩৩৩১) নারী যেহেতু বাঁকা বস্তু আর বাঁকা বস্তু বেশি সোজা করতে চাইলে ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে তাই ইসলাম নারীর সাথে সদাচারণ করারও নির্দেশ দিয়েছে, কোরআনের সূরা আন নিসা’র ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে “তোমরা তাহাদিগের সাথে উত্তম আচরণ করো।”
আজকালকার যুগে আমরা একদল রসালো ধার্মিক দেখতে পাই যারা রেস্টুরেন্টে গিয়ে রেড ওয়াইনের পাশাপাশি ‘হালাল মাংসের’ খোঁজ করে! এই রসালো ধার্মিকেরাই সিনেমা হল চালু করার সময় হুজুর ডেকে দোয়া করায় যেন আল্লাহর রহমতে সিনেমা হলের ব্যবসা ভালো হয়। ছোটকালে একটা গল্প শুনেছিলামঃ এক মুসল্লি হুজুরের কাছে ওয়াজ শুনেছে, নামাজ পড়ার সময় মাথায় পাগড়ি পরা সুন্নত। এরপর মুসল্লী বেচারা নামাজ পড়তে গেছে। পাগড়ি পরার মতো বাড়তি কাপড় তার ছিল না, অগত্যা সে নিজের লুঙ্গিটা খুলে পাগড়ি হিসেবে মাথায় বেঁধে তারপরে নামাজে দাড়িয়ে গেল! আমি রসালো ধার্মিকদেরকে এই লুঙ্গি খুলে পাগড়ি বাধা মুসল্লির সাথেই তুলনা করতে পছন্দ করি। রসালো ধার্মিকদের মধ্যে আবার দুই শ্রেণি: একদল জেনেবুঝে ধার্মিক সেজে লোকদের ধোঁকা দেয়, আরেকদল হচ্ছে ‘যদি ইসলাম জেনে যাই তাহলে তো আর স্বার্থ উদ্ধার হবে না’ ভেবে নিজেকে এবং অন্যকে ধোঁকা দেয়।
রসালো ধার্মিকেরা ইসলাম পালন করে নিজেদের স্বার্থের অনুপাতে। তারা কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা নিজের বেলায় একরকম আর অন্যদের বেলায় আরেকরকম করতে বেশ পারঙ্গম। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক আমেরিকার সিনেটর ইলহান ওমরের কথা। ভদ্রমহিলা মাথায় হিজাব পরে রাজনীতি করেন, ইসলামের গুণকীর্তনও করেন অথচ তিনি কি জানেন না ইসলাম তাকে রাজনীতি করার অনুমতি দেয় না? তিনি এটা জানেন, কিন্তু এটিই তো হচ্ছে তার রসালো ধার্মিকতার পরিচয়। ইসলাম একজন নারীকে বিয়ের আগে তার পিতার দায়িত্বে রাখে আর বিয়ের পর বরের দায়িত্বে রাখে। ইসলাম সবসময়ই নারীকে তাঁর বাবা কিংবা ভাই কিংবা দাদা কিংবা বর (লোকেরা স্বামী বললেও আমি সচেতনভাবে এ শব্দটি এড়িয়ে চলি) এরকম কোন পুরুষের তত্ত্বাবধানেই থাকতে বলে বা থাকার নির্দেশ দেয়। এজন্যই একজন বিবাহিত নারীকে তার ঘর থেকে বরের পারমিশন ছাড়া বের হওয়ার অনুমতি ইসলাম দেয় না, রাজনীতি কিংবা চাকরি তো দূর অস্ত। ভারতের দেওবন্দ ঘরানার প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভী স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য শিরোনামে স্ত্রীদের দায়-দায়িত্ব লিখেছেন তার বইয়ে। চলুন দেখে আসি কি কি দায়িত্ব :
১) যথাযথভাবে স্বামীর প্রতি অনুগত থাকা, আদব বজায় রাখা। তবে স্বামী শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ করতে বললে অপারগতা প্রকাশ করা
২) স্বামীর সামর্থ্যের অতিরিক্ত কোন বিষয়ে তার প্রতি চাপ সৃষ্টি না করা
৩) অনুমতি ছাড়া স্বামীর সম্পদ ব্যয় না করা
৪) স্বামীর আত্মীয় ও আপনজনদের সাথে এমন ব্যবহার না করা যাতে তার মনে কষ্ট হয় (হুকুকে মুআ’শারাত, আশরাফ আলি থানভী: ৬৫,১১০,১১১)
ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া কিতাবের দ্বিতীয় খন্ডের ২১৮ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, স্ত্রী তার বরকে তুমি না বলে বরং আপনি বলে সম্বোধন করবে, কারণ আপনি বলে সম্বোধন করাতে বরের প্রতি মহব্বতের পাশাপাশি সম্মানও প্রকাশ পায়! কোরআনের সূরা আল বাকারার ২২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “পুরুষদের রয়েছে তাদের (নারীদের) উপরে শ্রেষ্ঠত্ব।”
ইসলাম কি নারীদের চাকরি করা বা টাকা রোজগার করার অনুমতি দেয়? চলুন ফতোয়ার কিতাব থেকে দেখে নিই। ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া কিতাবের একটি ফতোয়া এমন : “বিবাহের পূর্বে মহিলাদের ভরণপোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তার পিতার উপর। পিতা না থাকলে বড় ভাই বা অন্যান্য গার্জিয়ানদের উপর, আর বিবাহের পর তার স্বামীর উপর। তাই নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য মহিলাদের ভবিষ্যৎ চিন্তার প্রয়োজন নেই, কারণ আল্লাহ তাআলা এটা বহু পূর্বেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তবে যদি কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি না থাকে অথবা থাকা সত্ত্বেও দেখাশোনা করে বা করতে না পারে তখন নিজের চলার জন্য এমন কোন পেশা গ্রহণ করতে পারে যেখানে শরয়ী পর্দা লঙ্ঘিত হয়না। যেমন নূরানী মুয়াল্লিম ট্রেনিং নিয়ে বাড়িতে বসে মহিলাদের তালিম দেওয়া, হাতের কাজ করা ইত্যাদি। অনেক ভদ্রমহিলা এখন এভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন, কিন্তু হাইস্কুলের ছেলেমেয়েদের সহশিক্ষা দেয়া হয় এবং পুরুষ ও মহিলা উভয় ধরনের শিক্ষক সেখানে থাকেন যা শরয়ী ফরজ পর্দা লঙ্ঘন করে সেখানে চাকরি গ্রহণ করার কোন অবকাশ নেই। আর যদি এমন কোন স্কুল পাওয়া যায় যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই পর্দাকারিনী মহিলা সেখানে যেহেতু বেপর্দা হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই কাজেই এ ধরনের কর্মস্থলে পর্দার পাবন্দী করে চাকরি গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই [প্রমাণ : সূরা নূর ৩১, সূরা বাকারা ২৩৩, সূরা আহযাব ৩৩, সূরা মায়িদা ২, মিশকাত ২/২৬৯, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২:৩৩৮, মাআরিফুল কুরআন ৭:১৩৫, ফাতাওয়া রাহীমিয়া ৪:৯৪, থ্যে
নারীদেরকে ইসলাম সদা ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে বলেছে, অর্থাৎ সোজাকথায় সার্বক্ষণিক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা। একান্ত প্রয়োজনে বাইরে বেরোতে চাইলে শরীয়তের বিশেষ শর্ত ও বিধি মেনে ঘরের বাহিরে বের হওয়ার অনুমতি আছে। কোরআনের সূরা আল আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে নারীদের ঘরে অবস্থান করতে, এবং সাজসজ্জা করে বাহিরে ঘুরে বেড়াতে কঠোর ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে।
ইসলাম নারীর জন্য কি ধরনের প্রয়োজনে বাহিরে যেতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে চলুন সেটিও দেখে নেয়া যাক। বলে রাখা ভালো, শপিং করতে যাওয়া এমনকি বোরকা পরিধান করে বরের সাথে শপিংয়ে যাওয়াকেও ইসলাম প্রয়োজন হিসেবে বিবেচনা করেনি, তাই শপিং করতে যাওয়ার জন্য নারীকে ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। কারণ শপিংয়ে যাওয়াটা নারীর সার্বক্ষণিক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার চরম লঙ্ঘন।
ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়ার ২৫৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ফতোয়া দেয়া হয়েছে এভাবে, “মহিলাদের দ্বীনদারী টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতের উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তাদের কর্তব্য হলো সর্বদা গৃহাভ্যন্তরে থাকা, বাইরে না যাওয়া। তবে একান্ত প্রয়োজনে মাহরামের সাথে পর্দার সাথে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে। মহিলাদের শুধুমাত্র জিনিসপত্র পছন্দ করার জন্য স্বামীর সাথে মার্কেটে যাওয়ার অনুমতি শরীয়তে নেই, কেননা প্রথমত শরীয়ত মহিলাদেরকে যে প্রয়োজনে তার ভিত্তিতে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে এটা সে প্রয়োজনের আওতায় পড়েনা। কারণ প্রয়োজন থাকার অর্থ এমন জরুরত যে জরুরতের কারণে বাড়ির বাইরে বের না হলে বিশেষ অসুবিধা বা অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শুধু পর্দা করলেই মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়া জায়েজ হয় না, বরং প্রথমে বিশেষ জরুরত হতে হবে তারপর পর্দা সহকারে বের হওয়া জায়েজ হবে।”
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ইবনে তাইমিয়া বলেছেনঃ কোন স্ত্রী তার বরের অনুমতি ছাড়া বাহির বাড়ির বাহিরে বের হলে সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অবাধ্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এই অপরাধের কারণে সে পাপী হবে ও শাস্তি পাবার উপযুক্ত হবে।
(يُؤكّد ابن تيمية وعلماء آخرون أنّ خروج المرأة من بيتها دون إذن زوجها يجعلها عاصيةً لله ولرسوله تستحقّ عليه الإثم والعقاب)
সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতির কাছে ফতোয়া চাওয়া হয়েছিল, কোন নারী কি তাঁর বরের অনুমতি ছাড়া নিজ পরিবারের কাছে যেতে পারবে অথবা তাঁর নিজের কোন প্রয়োজনে বরের অনুমতি ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে পারবে? গেলে পাপ হবে কিনা?
উত্তরে ফতোয়া গ্রান্ড মুফতি শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায লিখেছেন :
ليس لها الخروج الا باذن زوجها، يحرم عليها ان تخرج الا باذن زوجها ولو كانت في تعزية لأهل ميت او عيادة المريض او لاهلها ليس لها الخروج الا باذنه، عليها السمع والطاعة
অর্থাৎ, কোনক্রমেই বরের অনুমতি ছাড়া স্ত্রী ঘর থেকে বেরোতে পারবে না। তার জন্য বরের অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া হারাম হবে, যদিও সেটা কোন মৃতের পরিবারেক সান্ত্বনা দেয়ার প্রয়োজনে হয় অথবা অসুস্থের সেবা করার প্রয়োজনে হয়, এমনকি নিজের পরিবারের সাথে কোন প্রয়োজনীয় কাজ থাকলেও স্ত্রীর জন্য বৈধ নয় বরের অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া। স্ত্রীর জন্য তার বরের কথা শোনা এবং আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য।
নারী কি একান্ত প্রয়োজনে চাকরি করতে পারবে?
ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়ার দ্বিতীয় খন্ডের ২৫৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা আছে : “শরীয়তের মূলনীতির আলোকে নারীর জন্য পরপুরুষের সাথে অফিস-আদালতে, কোর্ট-কাচারিতে চাকরি করা একেবারেই গর্হিত এবং নাজায়েজ কাজ। তাছাড়া এর দ্বারা পর্দাপ্রথা যা শি’আরে ইসলাম এবং একটি ফরয আমল তারও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে শরয়ী আহকাম লঙ্ঘিত হয়। এসব কারণেই মেয়েদের জন্য পরপুরুষের সঙ্গে কাজ করতে হয় এমন কোনো চাকরি করা নাজায়েজ।”
ইসলাম নারীর সামনে পোশাক-আশাক ও চলাফেরায় যে পরিমাণ ব্যারিকেড ও বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে তাতে করে একজন নারী তার নিজের মধ্যেই গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এত বিধিনিষেধ মেনে একজন নারী এমনিতেই ঘর থেকে বেরোতে চাইবে না।
মুসলিম নারীর জন্য পোশাক-আকাশের ইসলামিক ব্যারিকেড কি কি চলুন জেনে নেয়া যাকঃ “মেয়েদের জন্য বেগানা পুরুষ তথা যাদের সঙ্গে বিবাহ বৈধ তাদের সামনে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা ফরজ, তবে একান্ত প্রয়োজনে মুখমন্ডল ও পায়ের পাতা খোলার অনুমতি আছে। বর্তমানে ফিৎনার জামানা হওয়ার কারণে দুই হাতের কব্জি, পায়ের পাতা, চেহারা ইত্যাদিও ঢেকে রাখা জরুরি। বিনা প্রয়োজনে গাইরে মাহরামদের সামনে মুখমণ্ডল কব্জি ও পায়ের পাতা খোলা নিষেধ” (ইমদাদুল ফতোয়া ৪/১৯৭) হানাফি মাজহাবের (যে মাজহাবের অনুসারী ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সব মুসলিম) অন্যতম প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ আদদুররুল মুখতার কিতাবে লেখা রয়েছে :
وتمنع المرأة الشابة من كشف الوجه بين رجال، لا لانه عورة بل لخوف الفتنة
অর্থাৎ: যুবতী মেয়ের চেহারা পুরুষদের সামনে খুলতে বাধা দিতে হবে। এটা এজন্য নয় যে এটি সতরের অন্তর্ভুক্ত, বরং ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য (আদদুররুল মুখতার ১/৪০৫)
উপরোক্ত ইসলামী শরিয়া আইনের সিদ্ধান্তসমূহ দেখার পর আমরা কি এটা বুঝতে পারি না যে, ইসলাম একজন নারীর সামনে যে পরিমাণ বেড়া দিয়ে রেখেছে সেটি অতিক্রম করে কোন নারীর পক্ষেই চাকরি করা সম্ভব না? আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ইলহান ওমরের মতো হিজাব পরে রাজনীতি করা কিংবা হিজাব ইজ মাই চয়েজ বলে রাস্তার মোড়ে প্ল্যাকার্ড বহন করা এসব তো ইসলাম কোনোভাবেই অনুমোদন করে না। নারীকে ইসলাম মনে করে শস্যক্ষেত্র, যার মধ্যে শস্য হিসেবে উৎপন্ন হবে অগণিত ইসলামিক সন্তান (সুরা আল বাকারার আয়াত ২২৩ দেখুন)। ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ নারীদের সম্পর্কে পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তোমরা বেশি করে অধিক মহব্বতকারী এবং সন্তান দানকারী নারীদের বিয়ে করো, কেননা আমি কেয়ামতের দিন আমার অধিক সংখ্যক উম্মত নিয়ে গর্ব করব (বর্ণনায় : আবু দাউদ ও নাসাঈ) । ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ নারী আর পুরুষের মধ্যে এমন পার্থক্য দিয়ে গিয়েছিলেন যে, চৌদ্দশ বছর পরেও মুসলিম নারীরা এই পার্থক্যের বা বৈষম্যের দেয়াল টপকাতে পারেননি। মোহাম্মদ বলেছিলেন :
إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت، فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح
অর্থঃ “কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে (সহবাস করার জন্য) আর স্ত্রী অস্বীকার করে, আর এজন্য সে ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশতাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে’’ (সহিহ আল বুখারী, হাদিস নং ৩২৩৭)
আমার বুঝে আসেনা মোহাম্মদের আল্লাহ পুরুষের স্বার্থরক্ষায় এত অগ্রগামী কেন? আমার বুঝে আসে না মোহাম্মদের আল্লাহর কাছে নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা এসব কিছুর কোনই মূল্য নেই কেন? কেবলমাত্র ঘরের মধ্যে বসে বসে রান্নাবাড়া করা আর ঘনঘন সন্তান জন্মদান করাই কি ইসলামের উদ্দেশ্য? অবশ্য কথা কিন্তু ভুল না। আপনারা দেখবেন মুসলিমদের হুজুররা প্রায় সময়ই বলেঃ বেশি বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে পৃথিবীটা দখল করে ফেলতে হবে, মুসলমান দিয়ে ভরে ফেলে পৃথিবীটা দখল করতে হবে। বর্তমান বিশ্বের জিহাদি ইসলামের অন্যতম নেতা তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান একবার ইউরোপীয় মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ন্যূনতম পাঁচটি করে সন্তান জন্ম দিতে উপদেশ দিয়েছিলেন। এভাবে যদি পৃথিবীতে মুসলিমদের সন্তানদের কেবল কোয়ান্টিটি বাড়তে থাকে কিন্তু কোয়ালিটি নয় তবে কি আমরা কোন ভালোর আশা করতে পারি? আমরা কি এই জনসংখ্যা-জিহাদের পরিকল্পনায় জন্ম দেয়া শিশুদের দ্বারা একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে পারি? ইসলামের প্রধান দুর্বলতার জায়গা হচ্ছে নারী। নারীকে ঘরে বন্দি করে রাখতে পারলেই ইসলাম থাকবে, আর যেদিন মুসলিম নারীরা জেগে উঠবে যেদিন তাঁরা বুঝতে পারবে ইসলাম তাদের কেবল ঠকিয়েছে, ইসলাম তাদেরকে পুরুষের সেবাদাসী বানিয়েছে সেদিন আর ইসলামের পতন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
ইসলামপন্থীদের দেখবেন, ১০০ জন পুরুষ ইসলাম ত্যাগ করলে তাঁরা যতটা ভয় পায় একজন নারী ইসলাম ত্যাগ করলে তারচে বহুগুণ বেশি ভয় পায়। একজন নারী ইসলাম ত্যাগ করলেই ইসলামপন্থীদের হাঁটুর কাঁপন ধরে যায়। তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে – এই বুঝি তাদের তাসের ঘর ভেঙে পড়বে! এই বুঝি তাদের মুখেমুখে কপচানো বুলি ‘ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান’ অসাড় হয়ে পড়বে! এই বুঝি ওঁরা যুগযুগ ধরে নারীর বিরুদ্ধে যে সহিংসতা চালিয়েছে সেটি প্রতিরোধের মুখে পড়বে!